top of page
10515235_10153251136648442_7932812996166

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু : ক্ষণজন্মা এক বিস্ময়ের নাম

কবি বংশের উত্তরাধিকার নিয়ে যেন জন্মেছিলেন দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু। ক্ষণজন্মা এই কবি পৃথিবীতে এসেছিলেন কবিতার জরায়ুভেদকরে বাংলাসাহিত্যের মহাকাশ প্রজ্বলিত আলোকরশ্মি হয়ে। সখিনা আফ্রোদিতিও জানতে পারেনি কতটুকু পোড়ে প্রজ্বলিত সেই আলোকরশ্মি নিভে যাবে নিথর পূর্ণিমায়...!

কবি কখন যে শঙ্কা ভয়ের অদৃশ্য ছায়ায় হারিয়ে যেতে থাকেন আমরা কেউ জানতে পারিনি। সময়ের আগেই বিধ্বস্ত চারিপাশ অতিক্রম করে হেঁটে গেলেন কবরস্থানের দিকে...

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু

 

জন্ম ৩০ নভেম্বর ১৯৭০, মাতৃমঙ্গল, সিলেট। মৃত্যু ১৭ নভেম্বর ২০১৮, যুক্তরাজ্য। মূলত কবি তিনি। পাশাপাশি কথাসাহিত্যিক, গদ্যকার, ক্রিটিক। অনিয়মিতভাবে সম্পাদনা করেছেন চিন্তা ও চিন্তকের একটি ছোটকাগজ ‘ধীস্বর’। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০-এর অধিক। আটটি কাব্যগ্রন্থের সংকলন ‘বিদ্যুতের বাগান সমগ্র’ নামে এক মলাটে মুদ্রিত। প্রকাশিত দুটি উপন্যাস—‘কাফের’ এবং ‘জ্যোৎস্নার বেড়া

MONJU REST IN PEACE.jpg

পাখিটা কানের পাশ দিয়ে ফুরুৎ করে

যাওয়া আসা করে

দোয়েল পাখিটা ধরতে পারি নি

মৃত্যু, তোমায় ধরে ফেলেছি

১৭বছর বয়সে শক্তির নিত্যতার সূত্র পাঠ শেষে যখন অনুভব করতে পারি- পৃথিবীকেও একদিন মরে যেতে হবে... তখন কবিতার খাতায় লিখে রাখি- 
পৃথিবী ধ্বংসের দিন সর্বশেষ যে তুমি ধ্বংসের মুখোমুখি তুমিই আমার সন্তান। 

পৃথিবীময় আমার কোটী কোটী সন্তান থাকা সত্বেও খুব সার্থপরের মতো একদিন আমিও পিতা হয়ে উঠি। সর্বকনিষ্ট সন্তান দানিয়েল-এর সঙ্গে ক্লান্ত অথবা অক্লান্ত আমি, আমি অথবা আয়ুর কঙ্কাল...
1472081_10152020767478442_1504488902_n.j
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নিয়ে  কবি বন্ধুদের স্মৃতিচারণ

নিসর্জন

আমার সংকুচিত হৃদপিণ্ডের ভেতর
দূরের আত্মীয় তারা উঁকি দিয়ে যায়

রক্তের দাবি নিয়ে
জানি আর ফিরব না
শুঁকতে যাব না রুশন নগরের দো-আঁশলা মাটি
নদীর দুই বাঁক হাঁটিয়াছি
তিন বাঁকে ডুবে যায় সারি সারি নীলক্ষেত,

জলের পাঁজর…দণ্ডিত করো
ওই রাতে শিশিরের জলে পা রেখে

শাদা পায়রাগুলি পুড়িয়ে ফেলেছি পুত্র

কবির  স্মরণে কবিদের কবিতা

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু- মুক্তগদ্য

1381977_10151880501138442_897537585_n.jp

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ও তার কাব্য গ্রন্থনা

 

ক্যান্সার আক্রান্ত কবিতা

১.

তোমার জন্য মালা গাঁথছি বলে রাগ করছ কেন

প্রিয় দক্ষিণ, আমার পূর্বপুরুষ তো জুতা সেলাই করতো

আমি শুধু পুষ্প সেলাই করছি

 

২.

এখনো ব্রীজ কালভার্ট কিছুই বসাই নি

চোখ পিছলে পড়ে যেতে পারো

কেউ আমার ফাটা মুখের দিকে ভুলেও তাকিয়ো না

 

৩.

আজ নগর-বার্মিংহামে রোদ উঠেছে

আমি বলছি না- আজ প্রিয়জনের রক্তে রোদ লাগবে

ধীরে তা দুধ হয়ে যাবে…

বরং কোথাও না কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে

যাচ্ছি

যাচ্ছি

যাচ্ছি

একা একা যাচ্ছি আমার যানাজায়

 

৪.

আমায় ক্ষমা করো দক্ষিণ

আমার ক্যান্সার-আক্রান্ত অকবিতাগুলো ভাসিয়ে দিচ্ছি কালিগঙ্গায়

কবি দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত কবিতাপত্রে…

দেবীদক্ষিণ

তুমি কি একবারও পাঠ করবে না

চূড়ান্ত মৃত্যুর আগে দিয়ে যাবে না কবিতার কিমোথেরাপি

 

৫.

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না

গড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে

কয়েক হাজার ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়েছি

চূড়ান্ত চূড়ায়…

দেবী দক্ষিণ, তুমি কি করুণা করে একটু ধাক্কা দেবে

চোখের ধাক্কা

 

৬.

আজ শ্রাবণের শেষ দিন

বন্ধুবর মঞ্জু মানোহিনের বাগানে কদম ফুটেছে…

আমার চারদিকে ছোট ছোট টিলাভূমি

একটাও পাহাড় নেই

…আর তুমি তো জানোই দক্ষিণ

পর্বত থেকে লাফিয়ে আত্নহননের আনন্দই আলাদা

মৃত্যুর মূল্যহ্রাস

 

কথা ছিলো সমুদ্রে ডুবিয়ে মারবে

দুঃখ থেকে গেলো

খাবারের মধ্যে কমদামি বিষ মিশিয়ে মারলে 

 

০২.

মাছের রক্তপান করে আজও বেঁচে আছি...

এজন্যেই কি আমাকে দেখে 

সমুদ্রের ফাটা-জলে ডলফিনগুলো হেসে উঠেছিলো

 

০৩.

অনেক অনেক দিন পর বার্মিংহামের আকাশে রোদ উঠেছে

মনে হচ্ছে, এখনো মরি নি

প্রিয় দক্ষিণ, হাড়ের অন্ধকারে নিভৃতে বহে 

আগুন বাহিত চর্বি ও আঙুর ফলের নদীনালা

 

০৪.

ধূসর পায়রাগুলো 

ফুসফুসের ভেতর ছেড়ে দিয়েছিলাম 

দীর্ঘদিন পর তারা রঙীন হয়েছে 

ফুসফুসের ভেতরে উড়ছে ক্যান্সারের ডানা

 

০৫.

দেয়াল হতে ঝড়ের জিহ্বাগুলো কেটে কেটে

সেই জন্মঅন্ধ

রহস্য গলিতে মিশে-যাওয়া সৌর কণিকার দিকে বার বার ছুটে গেছি

এবং দেখেছি, তোমাদের ছাদে চিরদিন চাঁদ ওঠে

আর আমাদের ছাদের অন্ধকার মাগুর মাছের মতো কুৎসিত ও কুচকুচে...

 

০৬.

আমি সেই পুরাতন বিষ-বিজ্ঞানী

কেন যে আমার কাছে কবিতা ও মধু প্রত্যাশা করো

ফিতা

মাদারিপুরের স্তনের দিকে ধাবমান সিদ্ধিরগঞ্জ…

বাতাসে ব্লেড উড়ছে
বাতাসে ব্লেড উড়ছে…

কেওড়ার ডালে
মৃত ময়ূরীর চুল দেখা যায়…
… এ ছায়া কর্দমাক্ত
ঠিক মানুষ নয়, মানুষের মতো অবয়ব।
শূন্য পাকস্থলি ফুঁড়ে জন্ম নিচ্ছে অজগর
দিদিরা যমুনামুখী অভ্যন্তর ফেলে দিতে
জরায়ন পরিত্যাগ করি…
আমি আর কেউটে সাপ অভিযাত্রী পরস্পর।

সু-প্রভাত নামে গ্রামের জঠরে…

রেলের বগিতে চড়ে চড়ুই পাখিটি যাচ্ছে
দাউ দাউ মহানগরের দিকে
আমাদের বেড়িবাঁধের ওপর
রাত্রিময় পড়ে রয়েছিল দুধশাদা বিবমিষা নাকি পূর্ণিমা!
চক্ষুদ্বয়ে আসমান গলে যেতে থাকে
চক্ষুদ্বয়ে আসমান গলে যেতে থাকে…

আমি আর রেলগাড়ি
নদী পাড়ি দেই অস্তিত্বের ডিঙিতে চড়ে
জলে কর্ণ গেঁথে শোনা যায়
আধখানা বাঘ, মহিষের হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ…

আর বেশি দূরে নয়
ঘূর্ণাবর্তে পিষে যাচ্ছি আলো
ল্যাম্পপোস্টে দণ্ডিত হবে আলো, শিশুর ক্রন্দন…

স্বর্গের সরুপথ দিয়ে
আমরাও পৌঁছে যাব আপন জংশনে
দূর বন্দরে রূপসীদের দেখা যায় মাংস-বোঝাই জাহাজের মাথায়
আমি দেখব না
ঢালাইয়ের নিচে চাপা-পড়ে-থাকা সন্তান-পাথর
অহ শিশু, পাথর শাবক!

এ যজ্ঞে শুয়ে থাকি মর্গের ভেতর…
গন্ধ ফেটে পড়ে যোনি ও নেপথলিনের
ইঁদুরের দেহে দুর্ভিক্ষের মতো কাম আসে
ইঁদুরের তিনটি পা উরু বেয়ে উঠে আসে
নাসারন্ধ্রের জমাট রক্তে, অবশিষ্ট ছায়ায়…
ক্রমে কালো হচ্ছে শাদা শাদা শবের বরফ।
আমার প্রেয়সী হায়!
মরু জ্যোৎস্নায় সে তো এক মেঘের জিরাফ
কেউ আমায় নিতে আসে না
কেউ আমায় নিতে আসে না…

মর্গে একা শুয়ে থাকি
জল ও অগ্নি বহুটা আংরা হলে ঘুম আসে, ঘুম আসে…
দূর গাঁয়ে তোমার লন্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা
দূর গাঁয়ে তোমার লন্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা…

যাত্রা

মাথার উপরে টিউমারের মতো চাঁদ আর

এই ফোসকা-পড়া জ্যোৎস্নায় হাঁটছি তো হাঁটছি আমার সঙ্গে আমি
একা
এইসব কাচের গর্ত, গির্জার ভেতরের ভগ্নাংশ বাতাস
মাঝে মাঝে কয়েকটা আপেল এবং সবুজ মোমবাতি
এ-সব কিছুই দেখছি না আর
তোমাকে তো বলেছি—অন্ধ হয়ে যাওয়ার আনন্দই আলাদা…
ঠিক কুয়াশা নয়, হৃৎপিণ্ডের ধুঁয়ায় হেঁটে হেঁটে বিষাক্ত বৃষ্টিতে ভিজি, টাটকা লাশের সঙ্গে
এই তো আমার অনাদি কালের স্নানপর্ব…
আমাদের ছেড়া নাভি, ছেড়া হাত পাসহ ভাঙা দাঁত, ভাঙা পেট. সূর্যঘড়ির চারপাশ ঘিরে ভাঙা কবুতরের ওড়াওড়ি
বাঘের হাড় বেয়ে রোদের সর্বশেষ ঝরনা শুকিয়ে গেছে বহুদিন আগে… তোমার ডিশ-এন্টিনায় এখনো কি একটা দোয়েল দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে, বসে থাকে…
এইসব রক্তের বেড়ি, কুয়াশাবিচ্ছেদ, এতসব প্রভায় দু-চোখ শক্ত হয়ে এলে আমাদের ট্রেন চলে যায় দূরে ঘোড়ায় চড়ে…
ট্রেন চলে যায় দূরে ঘোড়ায় চড়ে…
আর জানোই তো, বসন্তে পোড়া মানুষ
ঘুমন্ত গুলি হতে ছেড়ে দিয়েছিল গতিবিদ্যার গজল, জীবনের এইসব কুঁকড়ে-যাওয়া গান…
আর কারখানার মাছগুলো ইস্পাতের জানলা বেয়ে সমুদ্র বক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল

আমায় ক্ষমা করো

চিরদিনই যাই জল হতে জলের ভেতরে
দুধ হতে গলে পচে কৃষ্ণকায় দুধের মাংস…

ডোমঘরে একা

এই গলাকাটা রাতের শেষ রাতে

এক জোড়া অচিন পাথরের চোখ নড়ে ওঠে, চোখের পাথারে
এই ঘরে ধুয়া নেই, ম ম কুয়াশার ঘ্রাণ
অনন্ত পর্দার নিচে জারুল ও আফিম
পৃথিবীর আদি ভাই-বোন পাশাপাশি ফুটে আছে
রাতের শুরুতে ছিল নীলবর্ণ নাভির কান্না
এখন নৈঃশব্দ্য শুধু…
চব্বিশটি কফিন খালি পড়ে আছে
সূর্য উদয় হলে লাশগুলো চলে আসবে তিন হাজার ত্রিশ সালের বিশ্বফুটবল শেষ করে…
সূর্য উদয় হলে কুয়াশাকন্যার দাফন হয়ে যাবে অগ্নিজরায়ুর গোপন জটিলে…
(পৌরাণিক পাতিহাড় ছুড়ে দিচ্ছি হে সূর্য, তুমি উদয় হয়ো না শতবর্ষ এই ডোমঘরে এই কুমারী কফিনের পাশে। মানব-প্রেমিকার পাহারাদার আমি, স্বর্গ প্রত্যাখ্যান করে ধরায় এসেছি তেহাত্তর হুরি হত্যা করে। এখন ম্রিয়মাণ বাল্বের ভেতর শুয়ে আছি। আমায় ঘুমোতে দাও প্রভু, আমায় একবার প্রভু হতে দাও প্রভু…)
…তবু তার সঙ্গে ঝগড়া বিনিময় হতে হতে, জীবন ও মৃত্যু বিনিময় হতে হতে
মৃত সুন্দরীর ঘুম ভাঙে
ডোমের দুই চোখে নেচে ওঠে
অনুদ্ধারিত রিপুর মুদ্রা
মানুষের
জানোয়ারের

সাপ ও সূর্যমুখী

আঘাত করেছ অন্তরতম…

বেড়ালের মাথার ভেতরে ঘোলা হয়ে আসে চাঁদ
ছায়ার শার্দুল জেগে আছে সারারাত। প্রস্তর যুগ হতে
ধীরতম আসে পাথরের পাতা
দক্ষিণাবনে নিদ্রাহীন ওড়িয়েছি ছিদ্রের ঘুড়ি, মৃত্যুর মতো লাল…
সমুদ্রতীরে কেউ যাবে না আর
বন্দরে পড়ে আছে কুয়াশার কফিন
কেউ যাবে না সমুদ্রতীরে
কাঁটাবনে শোনা যায় প্রাণহীন ঘুঘুর বিলাপ
দূরতম
লায়লা নগরে শুকনা বাতাস ছেঁড়া ছেঁড়া…
মাথার উপরে সবুজ মাংস দিকচক্রবালব্যাপী
নদীতীরে
এ কোন বিচ্ছেদে বৃক্ষ বেঁকে যায়
অপ্সরা বসে আছে একা
আমি এক প্রাচীন প্রৌঢ়ার উনুনের মাঝে নিষ্করুণ আগুন, অর্ধেক ধুঁয়া। পঙ্গু ঘোড়াটির চোখের ভেতরে শুয়ে শুয়ে দেখি উড়ন্ত মাঠের স্মৃতি…
বজ্রাহত
ফড়িংয়ের ঝাঁক স্থিরতম জলসাঘরে
শাদা শাদা সারসের মুখ স্মৃতি-রায়মঙ্গলে, তামাকের বনে…
ক্রোধান্ধ
হয়ো নিষ্পাপ নিদ্রিত জন্তুর মতো
মৃতখণ্ডে সংসার-সয়াল
গজারের বন ছিল তোমার আমার
…তারা ফিরে গেছে, জগতের সব ইতর প্রাণীগুলি চিহ্ন রেখে পুরাতন গুহায়। রৌদ্রোজ্জ্বল রাত নিভে যাক তবে। আজ কেবলই ক্ষুদ্র হতে চাই। ছুরিকার মাথা হতে সর্বশেষ লৌহের কণা ঝেড়ে ফেলো তবে। আলোর অতীত, ফুঁ দিলে উড়ে যাই মৃতের উৎসবে..
যাত্রারম্ভে
খণ্ডিত চিলের ছায়া, সামান্য নদী ভেসে ওঠে
আঘাত করেছ অন্তরতম
বেড়ালের মাথার উপরে ঘোলা হয়ে আসে চাঁদ…

লাশ

 

চারটি চাকায় করে নিয়ে যাচ্ছি কুমড়োর বাগান
অস্তিত্বের লাশ ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছি দূরে
ঠেলাগাড়িতে করে বাংলাদেশ নিয়ে যাচ্ছি

ফেটে-পড়া সবুজ ক্ষেতে
লাল লাল ফড়িংয়ের নদী দেখা যায়…

পুরুষ ঢেলে দিচ্ছে নিরন্তর ঘাম ও বীর্য
তেলসিটকে রোদের লালায়
গোপনে পোক্ত হয় দুধের বিচি

জননী আমার
রোজ হাশরে রান্না করবেন ধানের গুদা

অতঃপর বখরা-ঈদ উদ্‌যাপনে যাই

গরু ও মানুষ কুরবানি দেই মাঠে মাঠে
মানুষ ও কুকুর কুরবানি দেই মাঠে মাঠে

গুনিন

 

এ-ধরণি কামনা বিলাসিনী
নিরবধি ভিজে যাবে বৃষ্টি ও বীরের বীর্যে

দূরে
রেজিনা শহরে মোমবাতি জ্বলে
কবে যে উনুন বেয়ে বহুদূর হেঁটে গিয়েছিল পুরাতন আগুন

ঘন বজ্রপাতে
আকাশে আকাশে দেখি রাঙা তরবারি, তাহাদের ঝলক
আজ মনে নেই
ঐ রাতে শাদা পাখিটিকে দুইখণ্ড করেছিল
কোন সে গুনিন, ইশারায়

 

দ্রাঘিমাংশে

 

দুধের বন্ধু দ্রাঘিমাংশে…

প্রাচীন জরায়ু অন্ধকারে
কোটি কোটি কীট মৃত্যূন্মুখ

জ্ঞানহারা আলোকপিণ্ডে
ভ্রমণে ভ্রমণে আমিও আত্মাহুতি দেই নির্মল নৌকায় চড়ে

মহাসমুদ্রে
ডেউয়ের মস্তকে ছিল না তো জল
জলহস্তি  ছিল অগনতি

খণ্ডিত আপেল

ঘুমের কাফন ফুঁড়ে তুমি আসো

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাও
নিরানব্বই স্তনের আড়ালে
ওই যে কুয়াশার গ্রাম বহুদিনের পরিচিত মনে হয়।

কতবার তোমায় বলেছি—আমরাও বীরভূমে যাব
অসহ্য উঁচু হতে লাফ দিয়ে
দু’চোখ বন্ধ করে দেবো
…আর আমার কাম ডুকরে উঠবে কান্নার মতো।

নড়ে উঠি, নড়ে উঠি ঘুমের ভেতরে
অতর্কিতে লাথি পড়ে যায়
অস্তিত্বের মাথায়; ভেসে ওঠে যমুনা নদী…
নিম্নভূমে তাকিয়ে দেখি
ঝরে-পড়া শিশ্নের মাথায় হিমাঙ্ক রমণীর দাঁতের কারুকাজ
চিকচিক চিকচিক করে।

এখনও কি বুঝতে হবে
নারী ও নুড়ি পাথরের যোজন যোজন ব্যবধান
বাবা কি বলবে আমায়—
জেগে ওঠো বল্লম রায়
তুমি তোমার সৎ মায়ের স্তন্যপান করবে
তুমি রাজমিস্ত্রি হবে!
নিদ্রা ভেঙে যায়
জাগ্রত, বয়স্ক বালিকার খোঁজে
ওই যোনিমূলে লেগে আছে ঠোঁটের মানচিত্র আমার।

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু স্মরণে কবিদের কবিতা

কবির সাথে শেষ কথোপকথন

মুজিব ইরম

: কবিতা লিখছেন, গুরু?

: না, গুরু। লিখছি না।

: মাথায় আসে?

: না, আসে না। আমি

অন্তিম পর্যায়ে আছি,

গুরু। কবিতা আসে না!

 

হাসপাতালের ছয় তলা থেকে

বাইরে তাকিয়ে থাকলেন কবি। বাইরে

রোদহীন দিন। বাইরে

কুয়াশাভেজা গাছ।

পত্রহীন। কান্নাভেজা।

 

: রাশিয়ার মতো লাগছে, গুরু।

 কোনো এক যৌবনে কবি

রাশিয়ায় ছিলেন। আর

আমার মনে আসে

:নাতাশা! নাতাশা! চোখ

দুটি জলে ভরে ওঠে।

অশ্রু লুকাতে আমি

বাইরে তাকিয়ে থাকি।

হেমন্তের পাতাগুলো বিষণ্ন হলুদ কান্না হয়ে

ঝরে।

পদ্যঘুমে কবির উত্থান

আহমদ ময়েজ

 

মঞ্জু মিস্ত্রালের মৃত্যু হলে

গিমিকি ছন্দের তালে ফেইসবুকও মঞ্জুগামী হয়

আমাদের শৈশবের উঠোন জুড়ে গরম জলে ভিজে ওঠা

কেচমা নিমপাতার রস

আমাদের আরো একবার আয়ু দর্শনে নিয়ে যায়

আমরা আরো একবার জ্ঞাত হই -

আয়ুষ্কালে মানুষ পরজীবী হয়

সসীম মানুষের দুঃখ দেখে

কবি ভ্লাদিমীর জয়নুদ্দিনেরও দুঃখ বাড়ে

 

দাফনার আগে একবার বুঝি উন্মিল হলো এক জোড়া চোখ

অসীম নীলিমায় মিশে যাবার আগে

প্রিয় কাব্যগ্রন্থে হাত রাখতে উদগ্রিব কবি

শেষ চিঠিতে রেখে যায় বিষাদের ঘন-নিঃশ্বাস

প্রিয় দক্ষিণা দর্শনে এ জীবন উজাড় হলো

পথের শেষ সীমানায় এ কেমন আকুতি?

নগর-বার্মিংহাম দাবড়ানো শেষে

শূন্য করোটিতে হলুদ পাতারা ঝরে পড়ে...

ঝরে পড়ে সিরাজাম মুনীরা।

কবিবিধ্বংসী কবিতার উপাখ্যান

মোহাম্মদ ইকবাল 

(প্রিয় কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ও কবি মুনিরা চৌধুরী স্মরণে)

কবিতা পরজীবী সর্বভুক!

নিরন্তর গ্রাস করে কবির মগজ, অস্থি মজ্জা হৃৎপিণ্ড 

কেড়ে নেয় তাঁর স্ত্রী পুত্র সংসার

কখনও কবিকেও ছাড়িয়ে যায় কবিতার প্ররাক্রম!

কবিতা অতিক্রম করে সমস্ত ভৌগলিক সীমারেখার কাঁটাতার। 

তৃণভোজী কবিকে গিলে ফেললে কবিতারাও হয়ে ওঠে মাংসাশী।

কখনও কবিতা নিজেই কবির জীবন 'ভোগ আরতিতে' চেয়ে বসে। 

ক্যানসারের নীল খামে কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুও পেয়ে যান জীবন অর্ঘে সমর্পনের ভোগ আরতির চহিদাপত্র।

মেহেকানন্দ তাঁর একান্ত নদীতে ভেসে আসে কবি মুনিরা চৌধুরীর পয়গামও।

আমরা পাথর হই!

হৃদয়ের উনুনে দাউদাউ জ্বলে চিত্ত পোড়া আগুন 

নগ্ন চোখের সামনে পুড়ে খাক মেহেকানন্দ নদী!

বজ্রাহত বিদ্যুতের বাগান!

দুচোখ বেয়ে নামে কাচ শীতল মঞ্জুময় পদ্যের ধারা, 

মথুরানন্দায় মুনিরানামার শোক! 

বুকের ভেতর গোপনে দাফন করি নিজ লাশ!

খোঁজি ভোগ আরতির তালিকা শীর্ষে কে?  মোহাম্মদ ইকবাল না কি অন্য কেউ?

তবে কেউ কেউ অবশ্য লিখি কবিবিধ্বংসী কবিতার উপাখ্যান।

 

কবিতার অসুখ এবং কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু

ফারুক আহমেদ রনি



বুঝতে পারিনি নগরী কেন এত অন্ধকার
কোলাহল ডিঙ্গিয়ে ঠিকানাবিহীন আকাশ পাড়ি দিয়েছে
একটি অভিমানী পাখি...
শুভ্র পেখমে বেধে নিয়েছে বিশ্বস্ত আলোর সংসার
আমি হাত বাড়াই তার নাগাল পাইনা
গ্রহণেরচাঁদ বুঝি সে, অভিমানে মুখ লুকায়
অন্ধকার চিৎকার করে পরিত্রাণ খুঁজে
বোধের ভেতরে অনাবাদী প্রান্তর...
তীব্র আক্রোশে ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে মাটির শরীর।

আজ পূর্ণিমার বৃষ্টি হয় তোমার ঘুম ভাঙেনা
আপেলবাগানে মৌচাক, নি:সীম তোমার হাত
কালোরোদ গ্রাস করছে মোমের ছায়া
জ্যোতির্ময় হেটে যায় গোরস্থান।

তোমার কিসের এত অভিমান, বন্ধু
বাতাসের পীঠে চড়ে দ্রুতগামী বোরাকের সওয়ার হলে
কি অদ্ভুত আপোষহীন খেয়াল,
অদৃশ্য পাখামেলে তুমি পার করেছো
দক্ষিণের জঙ্গল, অথবা মঙ্গলকাব্যের বাগান
তোমার রক্তশিরায় ছিলো ইন্দ্রিয়বান সঞ্জীবনী মন্ত্রসার
তারপরও বাতাসের করাতে দ্বিখণ্ডিত হলে,
তোমাকে জিইয়ে রাখতে পারিনি।

আজ দেখো, কুকুর আর দেবতাদের পূজায়
দক্ষিণামুখী মানুষগুলো হুছট খাচ্ছে ঈর্ষার দেয়ালে
তুমি অভিমান নিয়েই পার করে দিয়েছো
আমাদের ধূয়োহীন আড্ডার চায়ের পেয়ালা
তোমারই ভাষায়-
“নি:সঙ্গ মাড়িয়ে যাবো মৃতপ্রাণ নক্ষত্রের ছায়া”
হ্যাঁ, ধূসর ছায়ারা আজো উড়ছে মধ্যাকাশে।

তোমাকে আজ আর কোথাও দেখতে পাইনা,

না, মুঠোফোনেও তোমার নিঃশ্বাসের স্পর্শ নেই

নশ্বরতার চরম ব্যাখ্যা নিয়ে নিশ্চুপ

সত্তরহাজার প্রতিরক্ষাবাহিনী

পাহারা দিচ্ছে তোমার অন্তর্লোক নিবাস,

যদি মন চায় দক্ষিণের জানালা খোলে

সহসা দেখে নিও আমার পাঁজরগুলোতে কেমন মরিচা ধরেছে

আমিও এখন সুপেয় বিষের নেশায়

সিগারেটের ধুয়ায় অক্সিজেন নিঃসরণ করছি...।

Without Light No Darkness Around

(My deepest love to my friend the best, most talented poet in our time-Delowar Hussain Monju)

Faruk Ahmed Roni

Poet, poet! Oh, Soul of the poet

Can you hear me?

You are not dead yet, you are asleep!

When darkness night wears anklets

And the birds are singing on the branch of tree

When the earth crossing the Neptune quietly

You are resting in peace, and not be bothered.

Can you hear? The angels are whispering

Their footsteps are diminished at far.

You may write your best poems ever to published i

n the future,

Oh poet, time awaited for verses to be winged.

Poet, poet! Oh, Soul of the poet

As you asleep in the skull of time,

Dropping green leaves from tree are still virgin,

Canal you crossed most is deluged with memory.

Stars are sparking over the sky,

Rays of moon lightened your heart,

A heart impelled with tune of nightingale.

Yes, time has stopped here,

Waiting for a distinct chapter of life,

While life is not ended yet,

You are just a time traveller

And we are waiting for you back.

Poet, of poet! Oh, Soul of the poet

Let me grab your hand gently,

And take you to the memory lane.

You are in deep of sleep, peace of mind,

You avail the fortune with exquisite dream.

Yes, there are unfinished work needs to be done,

More wait, to see millions year to come,

Until you claimed to be dead,

And wait for the angel to blow his trumpet.

bottom of page