top of page

দেওয়ালি-উৎসবে মঞ্জুর প্রদীপখানি

শামীম শাহান

 

রবীন্দ্রনাথ অনেককাল আগে বলেছিলেন, মানবসংসারে জ্ঞানালোকের দেওয়ালি-উৎসব চলছে। তাঁর মতো করে আমিও বলি, ভাবের জগতে নিত্য দেওয়ালি-উৎসব চলছে; আর এই দেওয়ালি-উৎসবে কবিরা আপনার আলোকে বড়ো করে জ্বালিয়ে থাকেন। আজ, এই মুহূর্তে কবি দেলওয়ার হোসেন মঞ্জুকে লিখতে গিয়ে মনে হলো, পৃথিবীর ভাবের জগতে মঞ্জু তার বৃহৎ প্রদীপখানি প্রজ্জ্বলন করে আলো হাতে চলেছেন আধারের যাত্রীর মতো। সেই প্রদীপশিখায় আজ দমকা বাতাস লেগেছে; তার কম্পন আমার হৃদয়কেও অস্থির করে তুলেছে; আমি আজ সত্যি অস্থির, অনিদ্র ও আর্ত। যদিও একজন কবি, একজন প্রাণচঞ্চল মানুষকে নিয়ে লিখা খুব দুরুহ বিষয়।

10515235_10153251136648442_7932812996166

বিশেষ করে যার একটা সমুদ্রের মতো মন আছে, পাহাড়ের সমান যার আত্মা-বিশাল আকাশের নিচে তিনি আরেকটি আকাশ বটে। সুখের সময় কাছে না-থাকলেও মানুষের কষ্টে তিনি কষ্ট পান, এগিয়ে আসেন সবার আগে। তিনি আমাদের প্রিয় একজন, আপনজন, আত্মার আত্মীয় আমাদের বন্ধু। মঞ্জুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে জিন্দাবাজারে। তারপর বিছিন্নভাবে দেখা হতো। যখনই  দেখা হতো মনে হতো তিনি একজন নিভৃতচারী, স্বল্পভাষী এবং প্রাণ চঞ্চল মানুষ। তারপর ধীরে ধীরে তার সঙ্গে দেখা বাড়তে থাকে। যুগভেরী-অফিস, রাজা ম্যানসন এবং অনুপ্রাস-এর আড্ডায়।


আমার কুপন-স্বভাবহেতু অনেকের সঙ্গেই মিশা হয়ে উঠত না বলে, এই প্রাণবান তরুণের সঙ্গে যদিও ব্যক্তিগতভাবে খুব ঘনিষ্টতা হয়নি; আর তা না হলেও তিনি বন্ধুই ছিলেন; উভয়ের পক্ষ থেকে। সবসময়ই তাকে আমার খুব আপন মনে হতো; বড়োই আপন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার অনেক কবিতা পড়তাম; কবিতার বইও পড়তাম প্রকাশিত হলে। তার কবিতার একটা আলাদা মাত্রিকতা ছিল, পড়লেই চেনা যেত মঞ্জুর কবিতা। কবি হিসেবে তিনি প্রেমিক ছিলেন। তার প্রেমের কবিতা আমার ভালো  লাগত, আজও লাগে।
তারপর দীর্ঘদিন পর আবার বিলেতে দেখা হয় কবির সঙ্গে। আমি সুরমায় কাজ করি। আমার কলিগ কবি ছড়াকার আহমদ ময়েজের সুবাদে বিলেতের কবি সাহিত্যকদের সাথে সুরমাকেন্দ্রিক আড্ডা এবং সাহিত্য আসরে অনেকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। একদিন দেখি হঠাৎ চঞ্চল একজন মানুষ সুরমা অফিসে আসেন, তাও রাতের বেলা। তিনি কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু। যদিও আমাকে আহমেদ ময়েজ বলেছিলেন, মঞ্জু আসবেন। প্রথমে আমি চিনতে না-পারলেও দেখা পরপরই দেখি মঞ্জু। আসলে আমাদের সকলেরই একটু বয়েস বেড়েছে। চেহারাও।
আমি বললাম, ময়েজ ভাই আমি উনাকে আশির দশকের শেষভাগ থেকেই চিনি। তারপর অনেক কথা, আড্ডা। যাবার আগে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কবি বললেন, বার্মিহাম আসেন বেড়াতে।
আমি বিলেতে প্রায় নতুন এসেছি। বললাম, যাবো। একদিন আহমেদ ময়েজ ও আমি রওয়ানা দিলোম বার্মিংহামে। থাকলাম আমার বন্ধু সৈয়দ মবনুর বাসায়। তারপর কবি মঞ্জু গাড়ি করে আমাকে বার্মিংহাম দেখালেন; রাতে তার বাসায় গেলাম। নানা উপাদেয় খাবারে আপ্যায়ন করলেন।
বার্মিংহাম এই কবির সুবাদে দেখা। তারপর কতো স্মৃতি, কতো কথা।  

এই বয়েসে একজন কবি কেনো হারিয়ে যাবেন? আমার এ-প্রশ্নের কে জবাব দেবে? তবু নিজেকে প্রবোধ দেই।
কিন্তু এটাও ঠিক জরাও দৈহিক জীবনের ধর্ম। আর জরা তো নিত্য কিছু নয়। একজন কবি তার মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে জরাকে মোকাবেলা করেন; এটাও যে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা।


কবিরা হৃদয়ের চিকিৎসক। কবিরা অমৃতের পুত্র। সুতরাং ভয়কি, আমি জানি এই কবি সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন যুগযুগ...।
প্রকৃতি তার হাকে যে দেওয়ালির প্রদীপ দিয়েছে, তা তিনি জ্বালিয়ে আলো দেবেন জগৎকে; এটইতো কবি প্রতি মানবজাতির প্রত্যাশা।
সমস্ত তারুণ্য ঘিরে যে প্রেমের বার্তা বহন করে এনেছেন মঞ্জু, তা তিনি পৌঁছাবেন ভাবীকালের প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে। আগামীদিনের পৃথিবীতে।
বছরের পর বছর।
আগামী বসন্তে, গ্রীষ্মে।
আরও বহু বসন্তে।
শুভকামনা, বন্ধু!

bottom of page